কুষ্টিয়ায় পদ্মায় বিলীন ঘরবাড়ি, হুমকিতে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও মহাসড়ক

আপডেট: October 20, 2024 |
inbound608172204842441048
print news

আসাদুর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তিন ইউনিয়নে পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এতে উপজেলার তালবাড়ীয়া ইউনিয়ন, বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের সাহেবনগর, বারুইপাড়া ইউনিয়নের মির্জানগরের বসতবাড়ি, কৃষিজমি, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, কবরস্থান, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও জাতীয় মহাসড়কসহ সরকারি স্থাপনা ভাঙনের কবলে পড়েছে।

এসব স্থাপনা রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকালে বারুইপাড়া ইউনিয়নের মির্জানগরে পদ্মা নদীর অংশে দেখা যায়, পদ্মার আগ্রাসী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

এই এলাকার বসতবাড়ি, কৃষিজমি, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বসতবাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন অনেকে। কেটে নিয়ে গেছেন নদীর পাড়ের গাছপালা।

বর্তমানে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে স্থানীয় মীর আব্দুল করিম কলেজ, মির্জানগর কবরস্থানসহ অসংখ্য স্থাপনা। এ ছাড়া কয়েক মিটার দূরেই কুষ্টিয়া-পাবনা জাতীয় মহাসড়কটিও হুমকির মুখে রয়েছে।

মির্জানগর কবরস্থান কমিটির কোষাধ্যক্ষ আশরাফুল ইসলাম বলেন ‘এখানে পদ্মার যে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে, তাতে কবরস্থান সংলগ্ন এলাকায় চলে এসেছে। আগে আমরা নদী দেখতে যেতাম।

নদী দেখতে যাওয়ার সময় তিন-চার বার দম নেওয়া লাগতো। সেই নদী এখন আমাদের নাগালে। গোরস্থান সংলগ্ন এলাকায় ভাঙন পৌঁছে গেছে।

এতে দেখা যাচ্ছে কবরস্থান নদীতে চলে যাবে। এ ছাড়া পাশেই রয়েছে একটি কলেজ। সেটিও ভাঙনের হুমকির মুখে আছে।’

একই গ্রামের স্থানীয় শেখ শামীম আহমেদ বলেন, ‘এই এলাকার একটি মাত্র গোরস্থান। সেটি নদীতে চলে যাচ্ছে। এই এলাকার মানুষকে মাটি দেওয়ার জায়গাটুকু আর থাকছে না।

সরকার যদি দ্রুত ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নিতো তাহলে এলাকার গোরস্থানটি ভাঙন থেকে রক্ষা পেতো।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।

ইতিমধ্যে নদীর পেটে চলে গেছে জাতীয় গ্রিডের দুটি বৈদ্যুতিক পোল। সবশেষ ১২ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পানির তোড়ে তলিয়ে গেছে জাতীয় গ্রিডের দ্বিতীয় নম্বর বৈদ্যুতিক পোল।

নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে আবাদি জমি, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেক স্থাপনা। হুমকির মুখে রয়েছে কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক।

এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর মিরপুর উপজেলার পদ্মা নদীতে তলিয়ে যায় বিদ্যুতের একটি টাওয়ার। গত এক সপ্তাহে সাহেবনগর, মির্জানগর, তালবাড়ীয়া এলাকায় প্রায় ১০০ একর বেশি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।

উপজেলার বহলবাড়ীয়া গ্রামের কৃষক ইসাহক জানান, ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বেশ কয়েক বিঘা জমি। বসতবাড়িই এখন সম্বল। যেভাবে ভাঙছে নদী তাতে শেষ সম্বলও বিলীন হয়ে যাবে।

বহলবাড়ীয়া জামিউল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ফিরোজ আহমেদ জুয়েল বলেন, ‘পদ্মা নদীর ভাঙন মাদ্রাসার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।

যেভাবে ভাঙছে তাতে যেকোনো মুহূর্তে মাদ্রাসাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। আমরা চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি।

পদ্মা নদী রক্ষা কমিটির নেতা মুফতি ইয়াকুব বিন আজমল বলেন, ‘পদ্মায় পানি কমার কারণে সম্প্রতি ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে স্থানীয় সাহেবনগর জামিউল মাদ্রাসা ভবন।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ‘পদ্মায় পানি কমার সঙ্গে ভাঙন তীব্র হচ্ছে।

প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব এলাকায় ভাঙন তীব্র হচ্ছে, সেসব এলাকায় ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। তবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর