মেঘলা – জাহিদুল ইসলাম জাহিদ

আপডেট: September 12, 2024 |

“জামান সাহেব, করেনটা কি সারাদিন? এ রকম খারাপ কোয়ালিটির প্রোডাক্ট হচ্ছে, চোখে পরে না আপনার? আপনি তো ডিপার্টমেন্ট ইনচার্জ, আপনার আরও সিরিয়াস হওয়া উচিত।”

“সরি সরি, সরি স্যার। আর এমন হবেনা। আমি এক্ষুণি দেখতেছি” বলেই পাশে দাঁড়ানো মেয়েটাকে বকা শুরু করলো।

“চোখে দেখোস না, হাত চলে না, খাস নাই, শরীরে শক্তি নাই? এক্কেবারে হাতের কব্জি কাইট্টা ফালামু।” মেয়েটা ভয়ে কেঁপে উঠলো । লাইনের সব গুলো মেয়েকে একইভাবে বকা দিতে দিতে জামান সাহেব সামনে দিকে চলে গেলো ।

আমি সামনের জড়োসড়ো মেয়েটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম । লম্বা ছিপছিপে গড়ন। কত আর হবে – ১৯ কি ২০ হবে বয়স। মিষ্টি শ্যামলা গায়ের রং, ভয়ে মুখটা মেঘের মত থমথমে হয়ে আছে। একটু টোকা পরলেই বৃষ্টির মত কাঁদতে শুরু করবে।

“এই মেয়ে কবে থেকে এখানে কাজ করো?”
“স্যার দুই দিন হইলো।”
“কী নাম তোমার?”
“মেঘলা।”

থমকে গেলাম,
“বাহ্, খুব সুন্দর নামতো তোমার!”

কিছুটা নির্ভয়ে চোখ তুলে তাকালো মেয়েটা।
আবারও থমকে গেলাম ।
অদ্ভুত সুন্দর টানাটানা মেঘের মত সজীব ছলছলে চোখ, নতুন জোয়ারের পানির মতন টলমলে।

“এই মেয়ে মন খারাপ করে কাজ করো কেনো? আনন্দ নিয়ে ফুর্তির সাথে কাজ করতে পারোনা? মন দিয়ে আনন্দের সাথে কাজ করো । তুমিই পারবে ভালো কাজ করতে । এতো সুন্দর নাম যার তার হাত থেকে অবশ্যই সুন্দর কাজই বের হবে।”

মূহুর্তের মধ্যে মেয়েটা অসম্ভব শক্তি সঞ্চয় করে জেগে উঠলো। দ্রুত হাত চালাতে শুরু করলো। সারা শরীর নাচের ভঙ্গিমায় দুলতো লাগলো। একটার পর একটা ভালো কাজ বের হতে লাগলো। পুরো টেবিল জুড়ে সুন্দর, নিখুঁত মান সম্মত কাজ দিয়ে ভরে উঠলো। যেমনটা বর্ষার আগমনে, বৃষ্টিজলে মাঠ ঘাট ভরে ওঠে।

জেগে উঠুক মেঘলা,বর্না, তুলি নামের অসম্ভব সম্ভাবনাময়ী মেয়েরা। বদলে যাক বাংলাদেশ, সম্ভাবনা মেঘলাদের হাতের মুঠোয় ।

লেখক জনাব মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম কর্মজীবী মানুষ হয়েও সব সময় শিল্প সাহিত্যের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি যেমন লেখালেখি করতেন,তেমন চমৎকার ছবি আঁকতেন।
এই সৃজনশীল মানুষ টি ১১ জুন ২০২৪ তারিখে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর