আন্দোলনে আহত আরও ৪ জনের মৃত্যু

আপডেট: August 16, 2024 |

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন এক আইনজীবীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে মরদেহ চারটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর স্বজনদের মরদেহগুলো বুঝিয়ে দেয়া হয়।

নিহতরা হলেন- কুমিল্লা সদর উপজেলার আইনজীবী আবুল কালাম (৫৫), চুয়াডাঙ্গার রাজমিস্ত্রি উজ্জ্বল হোসেন (৩০), নোয়াখালীর দোকান কর্মচারী আসিফ (২৬) এবং বরগুনার ওষুধ কোম্পানির সেলসম্যান আল আমিন হোসেন (২৭)।

নিহত আইনজীবী আবুল কালামের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার কাজীরগাঁও গ্রামে। বর্তমানে কুমিল্লা সদর উপজেলার মহিলা কলেজ রোডে থাকতেন।

মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আকিব নূর উল্লেখ করেন, ৫ আগস্ট সরকারের পদত্যাগের এক দফার কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন আবুল কালাম।

কুমিল্লা সদর থানার পাশে কুমিল্লা হাইস্কুলসংলগ্ন রাস্তায় মুঘলটুলি সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রায়হান ও তার বাহিনী আবুল কালামের ওপর হামলা করে এবং তাকে গুলি করে।

ওই দিনই তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে ৬ আগস্ট উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মারা যান তিনি।

নিহত উজ্জ্বল হোসাইনের স্ত্রী শিলু আক্তার বলেন, তাদের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামে। উজ্জ্বলের বাবার নাম আলতাফ হোসাইন।

পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন উজ্জ্বল। ৫ আগস্ট কাজ থেকে বাসায় ফিরে সন্ধ্যায় গিয়েছিলেন মুক্তারপুর মোল্লাবাজারে চা পান করতে।

সরকারের পদত্যাগের সেই দিন বাজারের একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে আন্দোলনকারীরা আগুন লাগিয়ে দেয়। ওই দোকানটিতে বসে ছিলেন উজ্জ্বলসহ এলাকার বেশ কিছু লোকজন।

সঙ্গে সঙ্গে দোকানে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এতে উজ্জ্বলসহ আরও কয়েকজন গুরুতর আহত ও দগ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলের পুরোনো বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। উজ্জ্বলের শরীরের ৬৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে মারা যান উজ্জ্বল।

নিহত আসিফের প্রতিবেশী জামাল উদ্দিন বলেন, তাদের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার মীর আলীপুর গ্রামে। আসিফের বাবার নাম মোর্শেদ আলম।

আসিফ কিছুদিন আগে একটি দোকানে কাজ নেন। ৫ আগস্ট সোনাইমুড়ি এলাকায় একটি মিছিলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে গুলিবিদ্ধ হয়।

মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বলেন, ৫ আগস্ট মিছিলে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৭ আগস্ট তাকে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় তিনি মারা যান।

নিহত আল আমিন হোসেনের ছোট ভাই রাসেল হোসেন বলেন, তাদের বাড়ি যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার আফরা গ্রামে। বাবার নাম আনোয়ার হোসেন বাবু।

বরগুনার আমতলীতে রেনেটা ওষুধ কোম্পানির সেলসম্যানের চাকরি করতেন আল আমিন, থাকতেন আমতলী শহরে। ৫ আগস্ট কাজ শেষে তিনি সেখানকার বাসার দ্বিতীয় তলায় ঘুমিয়ে ছিলেন।

বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আন্দোলনকারীরা বাসার নিচতলায় আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয় তলায়।

ঘুমিয়ে থাকা আল আমিনসহ তার কয়েকজন সহকর্মীর শরীরেও আগুন ধরে যায়। তখন তারা শরীরে আগুন নিয়েই দ্বিতীয় তলা থেকে লাফিয়ে রাস্তায় পড়েন।

পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলে নিয়ে যান। পরদিন ৬ আগস্ট তাকে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে এনে ভর্তি করা হয়। শরীরের ৩৬ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে আজ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আইসিইউতে তিনি মারা যান।

বিষয়গুলো িনশ্চিত করে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বলেন, মরদেহগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর