পুলিশ সদস্যদের জন্য আইজিপির ১২ নির্দেশনা

আপডেট: August 8, 2024 |

ক্ষতিগ্রস্ত সব পুলিশ সদস্যের জন্য আইন ও বিধি অনুযায়ী সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাসহ পুলিশ সদস্যদের জন্য ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম।

বুধবার (৭ আগস্ট) সকালেই আইজিপি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করে পুলিশকে কাজে ফেরানোর উদ্যোগ নেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের স্ব স্ব ইউনিটে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেন।

আইজিপির সই করা সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পুনর্বহাল সংক্রান্ত জরুরি নির্দেশনা নামে একটি অফিস আদেশে বলা হয়, বিরাজমান বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিবর্তনমূলক কার্যক্রমের ফলে সদ্য সংঘটিত ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে অভূতপূর্ব গণদাবি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

এ আন্দোলনকে দমন-পীড়ন ও কথিত শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণের নামে পুলিশের কিছু উচ্চাভিলাষী ও অপেশাদার কর্মকর্তার কারণে বল প্রয়োগের আইনসম্মত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। মানবাধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মানও প্রদর্শন করা হয়নি। কর্মকৌশল এবং নেতৃত্বের ব্যর্থতায় আমাদের অনেক পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, আহত ও নিগৃহীত হয়েছেন। একই সঙ্গে ধ্বংসযজ্ঞের ফলে পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আইজিপি বলেন, যারা (পুলিশ) আহত হয়েছেন, তাদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রতিটি হত্যার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত সব পুলিশ সদস্যের জন্য আইন ও বিধি অনুযায়ী সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

পুলিশের চেইন অব কমান্ড ও শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য ১২ দফা নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয় আদেশে। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে-

১. রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, পিওএম, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), সব মেট্রোপলিটন এবং জেলা পুলিশ লাইন্সসহ অন্য সব পুলিশ ইউনিটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ফোর্সের শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড পুনরুদ্ধার ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।

২. ঢাকা মহানগর পুলিশের রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, পিওএম, এপিবিএন, সব মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, সব প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষায়িত সব পুলিশ ইউনিটের সব অফিসার এবং ফোর্সকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে।

৩. ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব মেট্রোপলিটন, জেলা, নৌ, রেলওয়ে এবং হাইওয়ে থানার অফিসার ও ফোর্সদের স্ব স্ব ইউনিটের পুলিশ লাইন্সে যোগ দিতে হবে।

৪. পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অপারেশন্স কন্ট্রোল রুম সক্রিয় করা, দায়িত্ব বণ্টন করা এবং সারাদেশের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৫. ফোর্সের মনোবল বৃদ্ধি এবং কল্যাণ নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৬. জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের দাফন/সৎকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

৭. পুলিশের সব অস্ত্র-গুলির হিসাব, খোয়া/হারানো অস্ত্র-গুলির হিসাব, সিসি (কমান্ড সার্টিফিকেট)সহ সব ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে।

৮. সব অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় গার্ড অতিসত্ত্বর মোতায়েন করতে হবে। সিনিয়র অফিসাররা পুলিশ রেগুলেশন্স অনুযায়ী অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা, অস্ত্র-গুলি ইস্যু ও জমা সংক্রান্ত রেজিস্ট্রার লেখার বিষয়ে বিদ্যমান বিধিবিধান পালন নিশ্চিত করবেন।

৯. মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপাররা নিজ নিজ এলাকার জ্যেষ্ঠ নাগরিক, পেশাজীবী, ছাত্র প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও গণমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠন করবেন। এ কমিটি থানা এবং থানা এলাকার নিরাপত্তা বিধানে আপদকালীন সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

১০. থানার সব অফিসার ও ফোর্সের ব্যক্তিগত হেফাজতে থাকা অস্ত্র-গুলি স্ব স্ব পুলিশ লাইন্সে বা নিকটস্থ অস্ত্রাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো।

১১. বাংলাদেশ পুলিশের সব সমিতি এবং অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

১২. শৃঙ্খলার স্বার্থে সব স্তরের পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত, দলীয়, ব্যাচ, সমিতি, অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে পুলিশের কার্যক্রম সংক্রান্ত কোনো প্রকার বিবৃতি, দাবি, মন্তব্য বা প্রত্যুত্তর করতে পারবে না।

এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে আদেশে জানানো হয়েছে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর