রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক: খালেদা জিয়াকে মুক্তির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত

আপডেট: August 6, 2024 |

কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ সোমবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেশের তিন বাহিনী প্রধান ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের এক বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত হয়।

রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের লক্ষ্যে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দলের পক্ষ থেকে ওই বৈঠকে অংশ নেন। বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে ফখরুলও খালেদা জিয়ার মুক্তির সিদ্ধান্তের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।

দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ছয় মাস পরপর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিস, আর্থরাইটিস ও হৃদরোগসহ নানা রোগে ভুগছেন। শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পাওয়ার পর এ পর্যন্ত কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে খালেদা জিয়াকে। এখনো রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত ৮ জুলাই থেকে এই হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনি। একটি মেডিকেল বোর্ডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

এই মেডিকেল বোর্ড গত বছর অক্টোবরে জানায়, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভারের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। দ্রুত বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে তাঁর লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।

সরকার তাঁকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি না দেওয়ায় বিদেশ থেকে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ঢাকায় এনে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার লিভারে ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোরটোসিসটেমিক সান্ট (টিপস) সম্পন্ন করা হয়।

দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেকবারই খালেদা জিয়ার মুক্তির আবেদন করে তাঁর পরিবার। কিন্তু প্রতিবারই আবেদন নাকচ করেছে সরকার।

বঙ্গভবনের সভায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয় এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করা হয়। সভায় অনতিবিলম্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে সবাইকে ধৈর্য ও সহনশীল আচরণ করার আহ্বান জানানো হয় এবং সেনাবাহিনীকে লুটতরাজ ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এবং সম্প্রতি বিভিন্ন মামলায় আটককৃত সব বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন কোনোভাবেই বিনষ্ট না হয় সে ব্যাপারেও সভায় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাস, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নু ও আনিসুল ইসলাম, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, হেফাজতে ইসলামের মামুনুল হক, মুফতি মনির কাসেমী ও মাহাবুবুর রহমান, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ও শেখ মো. মাসুদ, মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে রাব্বি, জাকের পার্টির শামিম হায়দার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মাওলানা জালাল উদ্দীন আহমদ, গণসংহতি আন্দোলনের জুনায়েদ সাকী, গণ–অধিকার পরিষদের গোলাম সারওয়ার জুয়েল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল, ফিরোজ আহমদ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল হোসাইন, আরিফ তালুকদার, ওমর ফারুক ও মোবাশ্বেরা করিম মিমি এবং ইঞ্জিনিয়ার মো. আনিছুর রহমান অংশ নেন।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর