জিয়াউর রহমানের আমল থেকে প্রশ্নফাঁস শুরু হয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট: July 14, 2024 |

সরকারি চাকরিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং নিয়মের যেসব ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় হচ্ছে সেগুলোর সূচনা বিএনপির আমলে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জিয়াউর রহমান এসব অনিয়মের শুরু করেন এবং খালেদা জিয়ার আমলে তা গতি পায় বলে দাবি করেন সরকারপ্রধান।

রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। চীন সফর সম্পর্কে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিসিএসে পাশ করেছেন তাদের খুঁজে বের করতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমার অফিসের একজন পিয়ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে। সে ৪০০ কোটি টাকার মালিক।

হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। তাকেও বের করে দিয়েছি। আমি যখন দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স বলেছি তা করেই ছাড়ব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের আমল থেকে দেশে অনিয়ম শুরু হয়। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে হাওয়া ভবন থেকে যে তালিকা দেওয়া হতো সেটা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হতো।

ঢাকা কলেজে বিশেষ হলে এসব ছাত্রদের পরীক্ষা নিয়ে তাদের নিয়োগ দেওয়া হতো।

সরকার প্রধান বলেন, ২৪তম বিসিএসের মাধ্যমে দুর্নীতি শুরু করেছে বিএনপি। তবে, আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। অনেকে বলে আওয়ামী লীগের ইমেজ খর্ব হচ্ছে; আমি তা মনে করি না।

আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখব। আর আমরা অভিযান চালাচ্ছি বলেই আপনারা জানতে পারছেন। সাংবাদিকরা খুঁজে বের করুক। আমরা ব্যবস্থা নেব।

শেখ হাসিনা বলেন, যদি বেনিফিশিয়ারিদের খুঁজে বের করা যায়, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব। নেব না কেন? তাদের তো চাকরি করার কোনো অধিকারই থাকবে না।

কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে তাদের খুঁজে বের করে দেবে কে? যদি ওরা বলতে পারে, ওমুকের কাছে বিক্রি করছিলাম, প্রমাণ করতে পারলে সেটা দেখা যাবে।

আমি বিশ্বাস করি, বেনিফিশিয়ারি যারা, তাদেরও ধরা উচিত। তাহলে আর ভবিষ্যতে কেউ করবে না। কারণ, ঘুষ যে নেবে, আর যে দেবে; উভয়ই অপরাধী। তো প্রশ্নপত্র যারা ফাঁস করে আর যারা ক্রয় করে; তারা উভয়ই সমান অপরাধী। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

কিন্তু, এখন খুঁজে বের করে দেবে কে? সাংবাদিকরা যদি চেষ্টা করে, বের করে দেয়; ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

বিএনপির আমলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের শুরু দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ২৪ বিসিএস হয় ২০০২ সালে। তখন পরীক্ষা-টরিক্ষা হতো না। হাওয়া ভবন থেকে তালিকা যেতো।

ঢাকা কলেজে একটা বিশেষ কামরা ছিল। সেখানে বসে পরীক্ষা দিয়ে তাদের লোকজন চাকরি পেত। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও অনিয়ম তখন থেকেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় বলা হয়, এসব ধরতে গেলে ইমেজ নষ্ট হবে। আমি এটা মানি না। অন্যায় অবিচার ধরবই। তাদের ধরতেই হবে। ছেড়ে দিলে তো চলতেই থাকবে।

সরকার আন্তরিক বলেই সম্প্রতি প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ধরা পড়েছে বলে জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, অনেক দিন ধরে লেগে থেকে থেকে ধরতে পেরেছি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, ঘুষ যে দেবে আর ঘুষ যে নেবে উভয়ই অপরাধী। যারা ফাঁস করে আর যারা কিনে উভয়ই সমান অপরাধী। সরকার কাউকে ছাড় দেবে না।

‘চীন সফরে প্রাপ্তি কিছু নেই’ সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমে এমন সমালোচনা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সফরে ২১টি সমঝোতা স্মারক এবং সাতটি ঘোষণাপত্রে সই করা হয়েছে।

যারা এসব বলে বেড়াচ্ছে, জেনে বুঝে নাকি আমাকে হেয় করার জন্য। আমি খুব একটা বেশি গুরুত্ব দিইনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালে আমি দেশে আসার পর প্রতিটি ক্ষেত্রে, সবসময় আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হয়েছে। এতে আমার কিছু যায় আসে না। এর আগে ভারতে গেলাম। বলে দেশ বেচে এসেছি। এবার চীনে গেলাম। বলে কিচ্ছু পাইনি।

সরকারপ্রধান বলেন, এটা একটা শ্রেণির এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা। এছাড়া এভাবে কথা বলতে পারে না। তাদের ব্যাপারে কিছু বলার নেই।

ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সরকারপ্রধান বলেন, ভারতের গণমাধ্যমের কথা শুনে যারা কথা বলেন, তারা তো বলেছে, আমি সব বিক্রি করে এসেছি।

তাহলে তারা ভারতের গণমাধ্যমের কথায় বিশ্বাস করে কেন।
চীন সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ওর (মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল) জ্বর ছিল। আমার সঙ্গে যেতে পারেনি।

আমি একজন মা। আর ১১ তারিখেই তো এসেছি। বিকালে আসতাম, এসেছি সকালে। ছয় ঘণ্টার মধ্যেই এত তোলপাড়!

এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, বিদেশ সফর সংক্ষিপ্ত করে তার দেশে ফিরে আসা এটাই নতুন নয়, বহুবার এমন হয়েছে। তার প্রোগ্রাম দেখলে সেটা বোঝা যাবে বলে জানান সরকারপ্রধান।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর