ভিটা মাটি রক্ষায় আদিবাসীদের মানববন্ধন

আপডেট: July 8, 2024 |

আসাদুর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভূয়া কাগজপত্রাদি তৈরি করে আদিবাসী (বাগদি) সম্প্রদায়ের বসতভিটা, জলাশয় ও অন্যান্য জমি দখলে নেওয়ার পাঁয়তারার অভিযোগ উঠেছে।

উচ্ছেদের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তারা। এ ঘটনার প্রতিবাদে তারা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এমন অভিযোগ করেন আদিবাসী (বাগদি) সম্প্রদায়ের লোকজন।

কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কস্থ কুমারখালী বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিমে এ কর্মসূচির আয়োজন করে আদিবাসী বাগদি সম্প্রদায় ও ভূমিহীন সংগঠন।

কর্মসূচি শেষে তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপজেলা প্রশাসনের নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।

কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন আদিবাসী বাগদি সম্প্রদায়ের মহাদেব, সুমন সরকার, শ্রী চঞ্চল সরকার, বাসন্তী, বীর মুক্তিযোদ্ধা চাঁদ আলী, উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মেরিনা আক্তার মিনা, কুমারখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এস এম রফিক প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, প্রভাষক তুহিন বিশ্বাস ও তার সমর্থকরা ভূয়া কাগজপত্রাদি তৈরি করে বারবার আদিবাসী (বাগদি) সম্প্রদায়ের জমি দখল, বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ ও হামলার পাঁয়তারা করেছেন।

বাগদি সম্প্রদায়ের ভূমি ও বসতবাড়ি রক্ষা ও স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।

লিখিত স্মারকলিপি সুত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫০ বছর ধরে কুমারখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সেরকান্দি বুঁজরুখ দুর্গাপুর প্রামে প্রায় ৭০ টি আদিবাসী ( বাগদি) সম্প্রদায়ের পরিবার বসবাস করছেন।

তাদের বসবাসের জন্য ওই মৌজার ৩৪০ নম্বর খতিয়ানে দুই দশমিক ৯৭ একর এবং কুমারখালী মৌজার আর এস ১০১ নম্বর খতিয়ানে এক দশমিক ৫২ একর দেবোত্তর সম্পত্তি রয়েছে।

তার মধ্যে ২৬ টি পরিবার উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) কার্যালয় থেকে শূণ্য দশমিক ৯৪ শতক (ক) তফসিলভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি ডিসিআর নিয়ে বসবাস করছেন।

১৯৭৬ সালে বুঁজরুখ দুর্গাপুরের বাসিন্দা আব্দুল বারী শেখ উক্ত জমি তার নিজের দাবি করে কুষ্টিয়া সাবজজ আদালতে রাষ্ট্রকে বিবাদী করে মামলা করেন।

যার দেওয়ানী মামলা নম্বর ১৬৮/৭৬। তবে তার স্বপক্ষে আদালতে জমি সংক্রান্ত কাগজপত্রাদি দেখাতে না পারায় ১৯৮৯ সালের ২৮ আগষ্ট আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন এবং রাষ্ট্রপক্ষে রায় বহাল থাকে।

এরপর উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও কুমারখালী মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক তুহিন বিশ্বাস ভূয়া কাগজপত্রাদি তৈরি করে বিভিন্ন সময়ে আদিবাসীদের বসতভিটা, আশপাশের জলাশয় ও অন্যান্য জমি দখল নেওয়ার পাঁয়তরা করেন।

আর আদিবাসীরা ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জজ আদালতে তুহিন বিশ্বাসকে বিবাদী করে একটি মামলা করেন। যার দেওয়ানী মামলা নম্বর ২৯৭/২০১৯। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

আরো জানা গেছে, মামলা চলমান অবস্থায় ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি গভীর রাতে তুহিন বিশ্বাস উক্ত জমি নিজের দাবি করে সাইনবোর্ড লাগান।

আর আদিবাসীরা তা অপসারণ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।

এরপর ওই বছরের ৭ আগষ্ট গভীর রাতে তুহিন বিশ্বাস আদিবাসীদের পুকুর ভরাটের কাজ শুরু করেন। তারা সেটিও প্রতিহত করেন।

এরপর ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি আদিবাসীদের বসতভিটাসহ আশপাশের জমির ওপর উচ্চ আদালত ( হাইকোর্ট) স্থিতাবস্থা জারি করেন।

তা স্বত্বেও গত ২৯ জুন তুহিন বিশ্বাস আবারো ৪ টি স্পটে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে উক্ত জমি দখল করতে আসেন। সেসময় আদিবাসীরা সম্মিলিত ভাবে সাইনবোর্ড গুলো অপসারণ করেন।

এবিষয়ে আদিবাসী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মহাদেব সরকার বলেন, আদালতে মামলা চলমান। তবু ভূয়া কাগজপত্রাদি নিয়ে প্রভাষক তুহিন বিশ্বাস বার বার জমি দখল করতে আসছে। আমাদের উপর হামলা, ভাংচুর ও উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে প্রভাষক তুহিন বিশ্বাস জানান, উক্ত জমি তার ক্রয়কৃত। কিন্তু আদিবাসীরা তার কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায়ের জন্য মিথ্যা মামলা ও আন্দোলন করে তাকে হয়রানি করছেন।

কুমারখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এস এম রফিক জানান, ভূয়া কাগজপত্রাদি তৈরি করে তুহিন বিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসীদের ওপর হুমকি, ভাংচুর ও উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছেন।

তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রæত বিষয়টির সমাধান চান।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিরুল আরাফাত জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আদিবাসীরা আজ সকালে তার কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।

তিনি যথাযথ প্রক্রিয়ায় সেটি প্রেরণ করবেন। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত দিলে তিনি তা বাস্তবায়ন করবেন।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর