জাফলংয়ে প্রেমিকের সহায়তায় ইমরানকে খুন করেন স্ত্রী

আপডেট: April 20, 2023 |

সিলেট প্রতিনিধি : সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে চাঞ্চল্যকর পর্যটক আলে ইমরান হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত নিহত আলে ইমরানের স্ত্রীসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গত সোমবার বিকালে গোয়াইনঘাট থানাধীন পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের জাফলং বল্লাঘাট রিভারভিউ রিসোর্ট এর পাশে কিশোরগঞ্জের যুবক আলে ইমরানের (৩২) লাশ পাথর চাপা অবস্থায় উদ্ধার করে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ। এ ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং-১৮, তারিখ: ১৮/০৪/২০২৩।

মামলার দায়ের পর অনুসন্ধানে নামে পুলিশ, এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৯ এপ্রিল) রাতে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পৃথক দুটি অভিযানে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামী নারায়নগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ উপজেলার বেলদি গাজীরটেক গ্রামের নাদিম আহমদকে (১৯) তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিনে হত্যা মামলার অন্যতম আসামী নিহত আলে ইমরানের স্ত্রী খুশনাহারকে(২১) ঢাকা বসুন্ধরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা পুলিশের এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

তিনি বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় নিহত আলে ইমরানের স্ত্রী খুশনাহারের সাথে হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক আসামী মাহিদুল হাসান মাহিন (২৪) এর দীর্ঘ দুই থেকে আড়াই বছরের প্রেম। আসামী মাহিন ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জিএম পদে কর্মরত। ভিকটিম আলে ইমরানের সাথে পাচঁ বছর আগে খুশনাহারের বিয়ে হয়। মাহিনের সাথে প্রেমে জড়ানোর পর থেকেই নিহতের স্ত্রী খুশনাহার এবং তার প্রেমিক মাহিন বিভিন্ন সময় আলে ইমরান কে হত্যা করার চেষ্টা করে আসছিলো।

এরই ধারাবাহিকতায় হত্যার উদ্দেশ্যে খুশনাহার তার স্বামী আলে ইমরানকে বেড়ানোর কথা বলে গত সোমবার রাতে ভৈরব থেকে ট্রেন যোগে সিলেটের উদ্দেশ্য যাত্রা করে। অন্যদিকে একই দিনে প্রেমিক মাহিন ও মাহিনের অফিসে কর্মরত গ্রেফতারকৃত আসামি নাদিম এবং আরেক পলাতক সহযোগী ঢাকা কমলাপুর হতে ট্রেন যোগে সিলেট এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

রোববার সকাল ৭;৫০ মিনিটের দিকে জাফলং বল্লাঘাটস্থ “রিভারভিউ রিসোর্ট এন্ড আবাসিক হোটেল” এর ১০১ নং কক্ষে আলে ইমরান এবং তার স্ত্রী খুশনাহার অবস্থান করেন পাশাপাশি অন্য তিন আসামি জাফলং বল্লাঘাট হোটেল শাহ আমিন এ অবস্থান করেন।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ইমরানের স্ত্রী খোশনাহার হত্যাকাণ্ডের পূর্বেই কৌশলে তাদের হোটেল রুমের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে মাথা ব্যাথার ঔষধ এর কথা বলে রাত ১০ টার দিকে আলে ইমরানকে তার স্ত্রী খুশনাহার ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর যখন আলে ইমরান ঘুমিয়ে যান তখন স্ত্রী খুশনাহার তার প্রেমিক মাহিনকে হোটেল রিয়ারভিউ রিসোর্ট এন্ড আবাসিক হোটেল ডেকে নিয়ে আসেন। আনুমানিক রাত ১২ ঘটিকার সময় হত্যাকারী মাহিন তার অপর দুই সহযোগীকে নিয়ে হোটেল রিয়ারভিউ এর ১০১ নং কক্ষে প্রবেশ করে এবং রাত ২ টার দিকে আলে ইমরানের স্ত্রী খুশনাহার এবং প্রেমিক মাহিন গলায় গামছা পেচিয়ে আলে ইমরানকে হত্যা করে।

এই সময় গ্রেফতারকৃত অপর আসামি নাদিম আলে ইমরানের পা চেপে ধরে এবং পলাতক অপর সহযোগী রুমের বাহিরে পাহাড়া দেয়। একসময় আলে ইমরান এর মৃত্যু নিশ্চিত হলে আনুমানিক রাত ০৩.০০ ঘটিকার সময় হত্যাকারী মাহিন ও অপর দুই সহযোগী আলে ইমরানের মৃত দেহ লুকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে হোটেলের পাশে পাথর চাপা দিয়ে রাখে। পরবর্তীতে হত্যাকারীরা হোটেল থেকে ভোর ০৪.৩০ মিনিটের সময় বের হয়ে অটোরিকশা (সিএনজি) যোগে সিলেট পালিয়ে যায়।

জেলা পুলিশের সংবাদ সম্মেলনের বরাত দিয়ে জেলা পুলিশের সহকারী মিডিয়া কর্মকর্তা শ্যামল বণিক বলেন, প্রাথমিকভাবে গ্রেফতারকৃত আসামীরা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর