ভারতের আদিবাসীরা বাঘের সঙ্গে সহাবস্থান চান

আপডেট: April 9, 2023 |

অর্ধ শতক আগে ভারতে শুরু হয় বাঘ সংরক্ষণ কর্মসূচি। যার প্রতিক্রিয়ায় বাস্তুচ্যুত হন লাখ লাখ আদিবাসী।

রোববার সেই কর্মসূচির ফল ঘোষণা করবেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার আগেই বনভূমিতে নিজেদের অধিকার ফেরত চাইছেন আদিবাসীরা। খবর এপি।

কর্নাটকের মহিশুরে বিক্ষোভে নেমেছেন আদিবাসীরা। তারা বলছেন, গত ৫০ বছরে এই ধরনের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্প দ্বারা বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

১৯৭৩ সালে ইন্দিরা গান্ধীর আমলে বাঘ সংরক্ষণে ‘প্রজেক্ট টাইগার’ হাতে নেয়া হয়। ওই সময় আবাসস্থল ধ্বংস, অনিয়ন্ত্রিত শিকার, মানুষের প্রতিশোধজনিত হামলার কারণে বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যায় বড় বিড়ালগুলো। এরপর আইন করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া।

আজ কর্নাটকের বান্দিপুর ব্যাঘ্রপ্রকল্প পরিদর্শনে যাবেন মোদি। মধ্যপ্রদেশের পরে এখানকার জঙ্গলেই দেশটির সবচেয়ে বেশি বাঘের বাস। মোদির তিন দিনের ‘ব্যাঘ্রপ্রকল্পের ৫০ বছর স্মরণ’ কর্মসূচিরতে প্রকাশ হবে পঞ্চম দফার প্রতিবেদন ও একটি স্মারকমুদ্রা। এ ছাড়া অন্যকিছু প্রকল্প পরিদর্শন করবেন তিনি।

বেশ কিছু আদিবাসী গোষ্ঠীর দাবি, সেই সংরক্ষণ কৌশল ছিল মার্কিন পরিবেশবাদ দ্বারা প্রভাবিত। যার অর্থ ছিল, কয়েক হাজার বছর ধরে বনভূমিতে বসবাসকারী অসংখ্য সম্প্রদায়কে উপড়ে ফেলা।

পরে আদিবাসীরা পৈতৃক জমি থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদ ও বন পরিচালনা বিষয়ে নাগারহোল আদিবাসী বন অধিকার প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করেন।

জেনু কুরুবা জনগোষ্ঠীর জে এ শিবু বলেন, নাগারহোল ছিল প্রজেক্ট টাইগারের আওতায় আনা প্রথম বনগুলোর একটি। যেখানে বাঘ সংরক্ষণের নামে আদিবাসীদের জঙ্গল থেকে বের করে দেয়া হয়। তারা নিজেদের জমি, মন্দির বা বন থেকে মধু সংগ্রহ করার অধিকার হারিয়ে ফেলেন।

ভারত সরকার ‘বিশেষভাবে দুর্বল’ শ্রেণীবদ্ধ করেছে এমন ৭৫টি উপজাতীয় গোষ্ঠীর একটি ৪০ হাজার সদস্যের জেনু কুরুবা। মধু তাদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদিম বনভূমিকে সংরক্ষণ নীতিগুলো স্থানীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কুসংস্কার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।

ভারত সরকারের আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবরই বলে আসছে, তারা আদিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু ভারতে ১০ কোটির বেশি আদিবাসীদের মধ্যে মাত্র এক শতাংশের বনভূমির উপর অধিকার পেয়েছে। যদিও ২০০৬ সালে পাস হওয়া সরকারি বন অধিকার আইনের লক্ষ্য এ সব সম্প্রদায়ের ওপর ঘটা ‘ঐতিহাসিক অবিচারের আগের অবস্থা’ ফেরত আনা।

এদিকে ভারতের বাঘের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। দেশটিতে রয়েছে দুই হাজার ৯৬৭টি বাঘ। যা বিশ্বের বন্য বাঘের ৭৫ শতাংশের বেশি। অবশ্য ভারতে সংরক্ষিত এলাকার তুলনায় বেশি বাঘ রয়েছে। তাদের এখন কোনো কোনো সংরক্ষিত বনের পাশে শহরের প্রান্ত ও আখের খেতে দেয়া যায়।

বালি ও জাভার বাঘ অদৃশ্য হয়ে গেছে। চীনেও সম্ভবত বন্য অঞ্চলে বাঘ নেই। সুন্ডা দ্বীপের বাঘ, অন্যান্য উপ-প্রজাতি শুধুমাত্র সুমাত্রায় পাওয়া যায়। সে সব বিবেচনায় বাঘ সংরক্ষণে ভারতের প্রকল্পটি অনেকের কাছে সফল ও প্রশংসিত।

প্রজেক্ট টাইগারের দায়িত্বে থাকা ভারতীয় সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তা এসপি যাদব বলছেন, প্রজেক্ট টাইগারের মতো কর্মসূচি বিশ্বে খুব কমই আছে। কারণ এত পরিসর ও ব্যাপক পরিকল্পনা অন্য কোথাও সফল হয়নি।

কিন্তু বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক অশোকা ট্রাস্ট ফর রিসার্চ ইন ইকোলজি অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্টের শরৎচন্দ্র লেলে বলছেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের মডেলটি বেশ সেকেলে। বাঘ সংরক্ষণের জন্য তারা স্থানীয় সম্প্রদায়কে বনে প্রবেশ করতে বাধা দেন, এর সামাজিক খরচ অনেক বেশি।

তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের মাধ্যমে পরিচালিত বন এখন সফল উদাহরণ। যেখানে মানুষ উপকৃত হয়েছে, বাঘের সংখ্যাও বেড়েছে।

ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটির পরিচালক বিদ্যা আথ্রেয়া দুই দশক ধরে বাঘ ও মানুষের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি এই বিষয়ে একমত। আথ্রেয়া বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে আমরা সবসময় বন্যপ্রাণীকে মানুষের উপরে রাখি। ভারতে বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য আদিবাসীদের জড়িত করাই হলো এগিয়ে যাওয়ার পথ।

একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় জেনু কুরুবা সম্প্রদায়ের শিবুর জবানে। তিনি বলেন, আমরা বাঘকে দেবতা মনে করি। আমাদের বনের রক্ষক তারা।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর