বালুর ঘাট দখল নিয়ে সংঘর্ষ: বিএনপি দুই নেতা বহিস্কার

আপডেট: October 18, 2024 |
inbound5912868074762417177
print news

আসাদুর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার ইজারা নেওয়া গড়াই নদীর বালুর ঘাট দখল ভাগাভাগি নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ওয়ার্ড বিএনপির দুই নেতাকে বহিস্কার করেছে দলটি।

এ ছাড়া ওই ওয়ার্ড বিএনপিসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সব ধরণের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুগিয়া এলাকায় গত মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দিন ধরে একাধিক হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন ওই বালুঘাট থেকে সাময়িকভাবে বালু অপসারণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।

এ ঘটনায় ৫২ জনকে আসামি করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন প্রতিপক্ষের হামলায় আহত খাইরুল ইসলাম।

মামলায় ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মজনুকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

জেলা বিএনপির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মহিদুল ইসলামের পরিচালিত জুগিয়া বালুঘাট অবৈধ পন্থায় নিয়ন্ত্রণ ও বালু উত্তোলনে সহায়তা করে সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমিরুল ইসলামকে সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রমাণ থাকায় একই ওয়ার্ডের সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান মজনুকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হলো।

একই সঙ্গে ওয়ার্ড বিএনপিসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিতের নির্দেশনাও দেওয়া হয়।

জানা গেছে, পৌর ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মহিদুল ইসলাম নদী থেকে বালু অপসারণের ইজারা নেন। তিনি ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

এক যুগের বেশি সময় ধরে তিনি বালুর ঘাট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে রাজত্ব চালাচ্ছেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলে জুগিয়া বালুর ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিতে আদাজল খেয়ে মাঠে নামেন স্থানীয় বিএনপির দুটি পক্ষ।

এতে বারখাদা ও জুগিয়া এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এরপর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমিরুল ইসলামসহ যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে মহিদুলের সমঝোতা হয়।

সমঝোতা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের মহিদুল ইসলাম ৪০ ভাগ ও বিএনপি নেতাদের অংশ ৬০ ভাগ অর্থ ভাগাভাগির শর্তে কয়েক দিন আগে বালু অপসারণ শুরু হয়।

প্রতিদিন সেখান থেকে প্রায় দেড় শতাধিক ট্রাকে অন্তত ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার বালু বিক্রি হয়।

এদিকে বালু অপসারণে বিক্রির টাকার ভাগ না পেয়ে ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মজনুর কর্মীরা এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।

তাদের দাবি বালুবাহী ট্রাকের কারণে এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটার পাকা সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। তারা জেলা প্রশাসনের কাছে বালুঘাট ইজারা বন্ধসহ বালুবাহী ট্রাক বন্ধের দাবি জানান।

গত মঙ্গলবার সকালে জুগিয়া ঘাটে বালু বিক্রির টাকা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রæপ বিবাদে জড়িয়ে পরে। এ সময় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন।

১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ও তার অনুগতরা মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ারে আগুন জ্বালিযে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

সূত্রটি আরও জানায়, একই ঘটনায় বুধবার বালু ঘাটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মহিদুল, তার ভাই ভাতিজা আর বিএনপির একটি পক্ষ এক হয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দেয়।

এ সময় বিএনপি নেতা শাহাজাহান ও মিজানুর রহমানসহ এলাকার লোকজন একত্র হয়ে তাদের প্রতিহত করতে পাল্টা হামলা চালায়। উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। গুলির শব্দও শোনা গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১০ জুন মেসার্স মেহেদী এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার মহিদুল ইসলামকে সর্বোচ্চ ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা দরদাতা বিবেচিত করে জুগিয়া ও গোপিনাথপুর মৌজায় গড়াই নদী খনন করা বালুর স্তূপ অপসারণের কার্যাদেশ দিয়েছে।

কার্যাদেশে আগামী বছরের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বালু অপসারণের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে মহিদুল বালু অপসারণে বিক্রি করে আসছিলেন।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার জানান, এই ধরনের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকবে এবং যাদের আওয়ামী সংশ্লিষ্টটা রয়েছে তাদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, গত দুই দিন ধরে ওই এলাকায় বালিঘাট নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ করছে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর