প্রকল্পে অনিয়ম, দূর্নীতি ও অফিসে বসেই ধূমপানের অভিযোগ পিআইও’র বিরুদ্ধে

আপডেট: September 21, 2024 |

জাহাঙ্গীর আলম, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এস.এম.এ. করিম এর বিরুদ্ধে প্রকল্পে বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

শুধু তাই নয় অফিসে বসে প্রকাশ্যে ধূমপানের অভিযোগও রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানালেও অদৃশ্য কারনে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না প্রশাসন।

আর ধুমপানের একটি ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

কয়েকদিন ধরে প্রকাশ্যে ধূমপানের ৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

অফিসে বসে পিআইও এস.এম.এ. করিমের প্রকাশ্যে ধূমপানের চিত্র ক্যামেরাবন্দী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে দেয়। পরে তা ভাইরাল হয়ে যায়।

নেটিজনেরা ক্যাপশনে লিখেন, হরিপুর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস.এম.এ. করিম অফিস রুমে প্রকাশ্যে ধূমপান করেন এবং বিভিন্ন সময়ে মাদক সেবনরত অবস্থায় অফিসে আসেন বলেও কথিত আছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। আরেকজন লিখেছেন সে নাকি গোপালগঞ্জ জেলার বাসিন্দা তাই ব্যবস্থা নিতে পারেন নি প্রশাসনের উর্ধতনরা। এছাড়াও বিভিন্নভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে অনুরোধ জানান।

ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, অফিস কক্ষে চেয়ারে বসে প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন এস.এম.এ. করিম। এসময় তার সামনে এক ব্যক্তি বসা ও দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেক ব্যাক্তি।

আর তিনি সিগারেট টানছেন। নিজ কক্ষে বসে ধূমপান করার এই ভিডিও নিয়ে সমালোচনার ঝড় চারদিকে।

দায়িত্বরত অবস্থায় সেবাগ্রহীতাদের সামনে একজন সরকারি কর্মকর্তা প্রকাশ্যে ধূমপান করতে পারেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

জানা গেছে, নিজ অফিসে বসেই একের পর এক সিগারেট টানেন তিনি। এক হাতে জ্বলন্ত সিগারেট রেখে অন্য হাতে সেবা গ্রহীতাদের ফাইল সহি করেন।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রন) আইন ২০০৫ এর সংশোধনী ২০১৩ আইনের বিধান অনুযায়ী , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, আধা সরকারি অফিস, স্বায়ত্বশাসিত অফিস ও বেসরকারি অফিস, হাসপাতাল ও ক্লিনিক ভবন, আদালত ভবনসহ পাবলিক প্লেসে ধূমপান করা দন্ডনীয় অপরাধ।

এই অপরাধ করলে তিনশত টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন এবং দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে দন্ডের দ্বিগুন হারে দন্ডনীয় হবেন।

অথচ হরিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এস.এম.এ. করিম এই আইনকে তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়তই অফিস চলাকালীন সময়ে নিজ কক্ষে বসে প্রকাশ্যে ধূমপান করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি জানান, পিআইও অফিস কক্ষে বসেই নিয়মিত ধূমপান করেন। অফিসে উপস্থিত যে কোন মানুষের মাঝেও প্রকাশ্যে ধূমপান করেন তিনি।

অফিসে বসে পিআইও’র প্রকাশ্যে ধূমপানের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ মানুষ। পিআইও’র ধূমপানের বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে সচেতন মহলের মধ্যে।

২০২১ সালের ৩০ মে হরিপুর উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হিসেবে যোগ দেন এস.এম.এ. করিম।

যোগদানের পর থেকেই সরকারী বরাদ্দের টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্নসাতসহ অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।

একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও এখনো এস.এম.এ. করিম ওপেন সিক্রেট। তারপরেও দাপট আর দাম্ভিকতায় সাড়ে তিন বছর ধরে বহাল তবিয়তে আছেন তিনি।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার এমন কর্মকাণ্ড আমাদের বোধগম্য নয়। একজন সরকারি কর্মকর্তা নিজ অফিসে বসে প্রকাশ্যে ধূমপান করতে পারেন না।

তার কাছ থেকে সমাজের শিক্ষণীয় আছে। এছাড়া প্রকাশ্যে ধূমপান সরকারিভাবেও নিষিদ্ধ। পিআইও’র এমন আচরণে সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টি হবে।

এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজী হননি হরিপুর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এস.এম.এ. করিম।

অফিসে বসে পিআইও’র ধূমপানের বিষয়টি নিয়ে কথা হয় হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আরিফুজ্জামানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ভিডিওটি নজরে এসেছে, এছাড়াও তার বিরুদ্ধে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সব বিষয় খতিযে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পেলে দ্রুতই ব্যবস্থা নিতে উর্ধতনের সুপারিশ করা হবে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর