১২ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজির নেতৃত্বে ছিলেন শাজাহান খান
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। তার নেতৃত্বে পরিবহন সেক্টরে গত কয়েক বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়েছে।
এদিকে ‘সড়ক পরিবহণে সংগঠন পরিচালনা ব্যয়’ সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রণয়ন করে এই চাঁদাবাজিকে বৈধতাও দেয়া হয়েছে।
একটি হত্যা মামলায় ধানমন্ডি এলাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি এখন রিমান্ডে রয়েছেন।
একে তো ছিলেন মন্ত্রী, আবার একই সঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি। তাই এই খাতে তার ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। ছিল বিশাল মাস্তান বাহিনী।
তিনি যা নির্দেশ দিতেন তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করত তার বাহিনী। অভিযোগ রয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পরিবহন সেক্টরে ১২ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে শাজাহান খানের লোকজন।
এর মধ্যে তার ছত্রছায়ায় গত ৪ বছরেই ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি হয়েছে। করোনার পর গত ৪ বছর ‘সড়ক পরিবহনে সংগঠন পরিচালনা ব্যয়’ সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রণয়ন করে এই চাঁদাবাজিকে দেয়া হয় বৈধতা।
অভিযোগ আছে, সড়কে চাঁদাবাজিকে প্রাতিষ্ঠনিক রূপ দিয়েছেন শাজাহান খান। সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত ২৪৯ শ্রমিক ইউনিয়নের মাধ্যমে চাঁদা তোলা হয়েছে। এর একটি বড় অংশ নিয়মিত গেছে শাজাহান খানের পকেটে।
বিগত সময়ে বিএনপির নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ অন্যান্য দাবিতে বৃহৎ পরিসরে আন্দোলনের ডাক দিলেই বন্ধ হয়ে গেছে সড়কের যান চলাচল।
এর নেপথ্যেও ছিলেন এই শাজাহান খান। সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের অন্যতম বাধাও ছিলেন তিনি।
এদিকে নির্বাচনী হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে শাজাহান খানের বার্ষিক আয় ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। যা ২০২৪ সালে হয়েছে ২ কোটি ২১ লাখ টাকা। এ সময়ে তার আয় বেড়েছে প্রায় ৩২ গুণ।
এ বিষয়ে পরিবহন শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, কোনো রকম আইনের তোয়াক্কা না করে পরিবহন খাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজির নেতৃত্বে ছিলেন শাজাহান খান।
বিভিন্ন টার্মিনাল, উপজেলা পর্যায়ে চাঁদা তুলে পাঁচ ভাগের এক ভাগ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নামে গেছে। এই ফেডারেশনের সবকিছুই চলেছে শাজাহান খানের ইশারায়।
২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পরিবহন সেক্টরে ১২ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে শাজাহান খানের লোকজন।