কুমারখালীতে সিজারের পর দুই প্রসূতির মায়ের মৃত্যু, ক্লিনিক সিলগাল

আপডেট: August 23, 2024 |

আসাদুর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে নোভা ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চার দিনের ব্যবধানে দুই প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

স্বজনদের দাবি, ভূয়া চিকিৎসক দিয়ে সিজারের কারনে রোগীদের মৃত্যু হয়। রোগীর মৃত্যুর খবর শুনে ক্লিনিকটি মালিক বদর উদ্দিনসহ কর্মরত সবাই পালিয়েছে।

ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগে লাশ নিয়ে নোভা ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে অবরুদ্ধ করে রাখেন স্বজন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র – জনতা।

শুক্রবার বেলা ১২ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত তারা ক্লিনিকটিকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।পরে খবর পেয়ে ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করেন প্রশাসন।

অভিযানে অভিযোগের সত্যতা ও ক্লিনিকে নানান অসংগতি থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সিলগালা করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিরুল আরাফাত।

এসময় কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. মো. আকুল উদ্দিন, থানা পুলিশ উপস্থিত ছিলেন। নিহতরা হলেন – উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের যদুবয়রা গ্রামের রিপন শেখের স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন (২৫)।

তিনি শুক্রবার (২৩ আগষ্ট) সকাল ৮ টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অপরজন নন্দলালপুর ইউনিয়নের বেলঘোড়িয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে মর্জিনা খাতুন (২৭)।

তিনি গত ১৮ আগষ্ট রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিক চত্বরে উৎসুক জনতার উপচেপড়া ভিড়। একটি এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে রাখা বৃষ্টি খাতুনের লাশ।

এ্যাম্বুলেন্সের সামনে একটি ভ্যানের উপর এক মহিলার কোলে রয়েছে বৃষ্টি খাতুনের একদিন বয়সি কন্যা সন্তান। পাশেই আহাজারি করছেন স্বজনরা।

নিহত বৃষ্টির মা চায়না খাতুন বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টার দিকে মেয়েকে সনো করাতে নোভা ক্লিনিকে এনেছিলাম। তখন সেখানকার ডাক্তার বলল সিজার করতে। বিকাল সাড়ে ৫ টার মেয়েকে সিজার করা হয়।

সিজার করে একটি কন্যা সন্তান পেয়ে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু রক্ত দেওয়ার কথা বলে বৃষ্টির সাথে আমাকে দেখা করতে দেয়নি। রাত ৯ টা পর্যন্ত তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়।

এরপর হঠাৎ রাত তিনটার দিকে তড়িঘড়ি করে ক্লিনিকের মালিক বদর উদ্দিন আমাদের একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহী নিয়ে যান।

সেখানে সকাল ৮ টার দিকে বৃষ্টি মারা যান। তাঁদের সঙ্গে ক্লিনিকের দুইজন নার্সও ছিল। তিনি বলেন, মেয়েকে মেরে ফেলেছে ডাক্তাররা। আমি সঠিক বিচার চাই।

আর কারো মায়ের বুক যেন খালি করতে পারে ওরা। নিহতের বাবা সাইফুল শেখ বলেন, ভূয়া ডাক্তার দিয়ে ক্লিনিক মালিক আমার মেয়েকে সিজার করিয়েছে।

সিজারের সময় একাধিক নাড়ি কেটে ফেলা হয়। আমি সুষ্ঠ বিচারের আশায় থানায় মামলা করব।

নোভা ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বদর উদ্দিনের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে ক্লিনিকের একজন কর্মচারী বলেন, ১৮ আগষ্টের রোগীর মতো এই রোগীরও ( বৃষ্টি) নাড়ি কেটে যায়। দুজনই রাজশাহীতে মারা যান।

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. মো. আকুল উদ্দিন জানান, মাত্র চারদিনের ব্যবধানে দুইজন প্রসূতি রোগীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ক্লিনিকটি পরিদর্শন করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের পরে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানানো যাবে।

তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিরুল আরাফাত জানান, অল্প সময়ে দুজনের মৃত্যুর অভিযোগ এবং নানান অসংগতি থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লিনিকটিকে সিলগালা করা হয়েছে।

নিহতদের স্বজনদের থানায় মামলা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ থানায় আসেননি বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ওসি আকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর