ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট কে এই মাসুদ পেজেশকিয়ান

আপডেট: July 6, 2024 |

ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ‘রান-অফ’ বা দ্বিতীয় পর্বে ভোটে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত।

শনিবার (৬ জুলাই) তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে পেজেশকিয়ান এক কোটি ৬৩ লাখ এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাইদ জালিলি এক কোটি ৩৫ লাখ ভোট পেয়েছেন বলে দেশটির নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।

এর আগে প্রথম দফা ভোটে তিনি ৪২.৫৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে সাঈদ জলিলি পান ৪০ শতাংশ। তেহরানের রক্ষণশীল সাবেক মেয়র মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ ১৪.৪ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন।

কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় ভোট দ্বিতীয় দফায় গড়ায়। দ্বিতীয় দফার ভোটে প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সংস্কারপন্থী প্রার্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান ও রক্ষণশীল প্রার্থী সাইদ জলিলি।

মাসুদ পেজেশকিয়ান দীর্ঘ পাঁচ বছর ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সাবেক সংস্কারবাদী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ খাতামির সরকারে এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ইরানের পার্লামেন্টে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের শহর তাবরিজে ২০০৮ সাল থেকে প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন তিনি। মাসুদ পেজেশকিয়ান একজন স্বনামধন্য কার্ডিওলজিস্ট। তিনি তাবরিজ ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সাইন্সের সাবেক প্রধান ছিলেন। এটি ইরানের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান মেডিকেল প্রতিষ্ঠান।

মাসুদ পেজেশকিয়ান ১৯৫৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পেজেশকিয়ান সাবলীল আজারবাইজানি এবং কুর্দি ভাষায় কথা বলতে পারেন। তিনি একজন কুরআন শিক্ষক এবং নাহজ আল-বালাঘার আবৃত্তিকার (শিয়া মুসলমানদের জন্য একটি মূল পাঠ্য)। মাসুদ পেজেশকিয়ান ইরান-তুরস্ক ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটিরও একজন সদস্য।

১৯৭৩ সালে তিনি তার ডিপ্লোমা লাভ করেন এবং তার নিয়োগের দায়িত্ব পালনের জন্য জাবোলে চলে যান। এই সময়েই তিনি ওষুধের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তার চাকরি শেষ করার পর তিনি তার নিজ প্রদেশে ফিরে আসেন, যেখানে তিনি মেডিকেল স্কুলে প্রবেশ করেন এবং সাধারণ চিকিৎসায় স্নাতক হন। মাসুদ পেজেশকিয়ান ১৯৮৫ সালে তার জেনারেল প্র্যাকটিশনার কোর্স শেষ করেন এবং মেডিকেল কলেজে ফিজিওলজি পড়া শুরু করেন।

ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় (১৯৮০-১৯৮৮) মাসুদ পেজেশকিয়ান প্রায়শই সামনের সারিতে যেতেন, যেখানে তিনি মেডিকেল টিম পাঠানো এবং একজন যোদ্ধা এবং ডাক্তার হিসাবে কাজ করার জন্য দায়িত্বে ছিলেন। যুদ্ধের পর তিনি তাবরিজ ইউনিভার্সিটি অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে সাধারণ অস্ত্রোপচারে বিশেষীকরণ করে তার শিক্ষা চালিয়ে যান। ১৯৯৩ সালে তিনি ইরান ইউনিভার্সিটি অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস থেকে কার্ডিয়াক সার্জারিতে একটি উপ-স্পেশালিটি পান। পরে তিনি হার্ট সার্জারিতে একজন বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন, যার ফলে তিনি ১৯৯৪ সালে তাব্রিজ ইউনিভার্সিটি অফ মেডিক্যাল সায়েন্সের প্রেসিডেন্ট হন, এই পদে তিনি পাঁচ বছর অধিষ্ঠিত ছিলেন।

১৯৯৭ সালে মাসুদ পেজেশকিয়ানের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় মোহাম্মদ খাতামির প্রশাসনে উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেয়ার মাধ্যমে। চার বছর পর তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন, ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পার্লামেন্টের প্রথম ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এর আগে মাসুদ পেজেশকিয়ান ২০১৩ এবং ২০২১ সালেও তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে ২০১৩ সালে তিনি হাসেমি রাফসানজানিকে সমর্থন দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন এবং ২০২১ সালে গার্ডিয়ান কাউন্সিল তার প্রার্থিতা বাতিল করে।

মাসুদ পেজেশকিয়ান আইআরজিসির সমর্থক এবং বর্তমান আইআরজিসিকে ‘অতীতের থেকে আলাদা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি ২০১৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আইআরজিসিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে ঘোষণার নিন্দা করেন।

২০১৯ সালে আমেরিকান ড্রোনের ইরান শুট ডাউনের পর মাসুদ পেজেশকিয়ান আমেরিকান সরকারকে সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করেন এবং ড্রোনটিকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য আইআরজিসি এর পদক্ষেপকে অপরাধী আমেরিকার নেতাদের মুখে একটি শক্তিশালী ঘুষি বলেও অভিহিত করেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈঠকে কিছু সমালোচনার জবাবে মাসুদ পেজেশকিয়ান আইআরজিসি ইউনিফর্ম পরেন এবং বলেছিলেন যে তিনি আবারও এটি পরবেন।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর